বিঃদ্রঃ সবিনয় অনুরোধ থাকবে লেখাটি সম্পূর্ণ পড়বেন। এতে আপনিই উপকৃত হবেন সব থেকে বেশি। না পড়ে অযথা লাইক পাবার জন্য এই লিখা নয়।
গত ২ বছর ধরে অসংখ্য মানুষ কে আমি এবং আমরা ফোন, ইমেইল আর বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় বিশেষ করে ফেইসবুকে কোন স্বার্থ ছাড়াই বিনা পয়সায় ফ্রি পরামর্শ আর কখনো কখনো সেবা দিয়ে যাচ্ছি নিরন্তর। এই কারণে অনেক সময় এই সেক্টরে যুক্ত অনেক প্রতিষ্ঠান এবং কিছু কিছু মানুষ আমাকে এবং আমাদেরকে পাগল, ফালতু, প্রতারক বলেছে এবং কখনো কখনো দেখে নেয়ার কথাও শুনতে হয়েছে। কিন্তু তারপরও আমি আর আমরা আছি এবং ইনশাল্লাহ থাকবো।
আমি বা আমরা জানি না আপনারা যারা আমাদের কাছে ফোন করেন বা অফিসে দেখা করতে আসেন তারা কেন বা কোন ভরসায় তা করেন ? কারণ বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আপনাদের আমরা চিনি না আর আমাদেরকেও আপনারা। তারপরও আপনারা যখন আমাদের উপর ভরসা আর আস্থা রাখেন তখন আপনাদের কৃতজ্ঞতা জানানোর কোন ভাষাই আমাদের কাছে থাকে না।
অনেক সময় গেছে কখনো আমরা ফোন ধরতে না পারলেও পরে সুযোগ করে নিজেরাই আপনাদের ফোন দিই। আপনাদের নানান কথা, জিজ্ঞাসা আর সমস্যার কথা শুনি ধৈর্য আর মনযোগ সহকারে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। আমরা বিরক্ত হই না। আমাদের অফিসিয়াল নাম্বার না হয় বিভিন্ন অনলাইন মাধ্যমে দেয়া আছে। কিন্তু ব্যাক্তিগত ভাবে যখন আমায় ফোন করেন তখন ভাবতে অবাক লাগে কি ভাবে আর কেমন করে আমার নাম্বার আপনারা যোগাড় করেন ? কি রাত ২টা বা সকাল ৭টা অথবা দিনের অন্য সময়, আপনাদের ফোন রিসিভ করতে হয়, কথা বলতে হয়। আপনাদের জিজ্ঞাসার উত্তর দিতে হয়, সমস্যার সমাধান দিতে হয়। দেশ বা দেশের বাইরে হতে এমন বেশ কিছু ফোন রোজ রিসিভ করতে হয়।
আপানদের ভালবাসা এমন, কোন মাসে আমার পোস্ট না দেখলে, কোরিয়া হতে একজন ফোন করে খবর নিবেন আমার শরীর ঠিক আছে না। সিঙ্গাপুর হতে এক ভাই জানতে চান আমি কেমন আছি। দুবাই, ইংল্যান্ড, আমেরিকা, মালয়েশিয়া, কানাডা, পর্তুগাল, জার্মানি, ইতালি, ফ্রান্স এমন অসংখ্য দেশের অসংখ্য মানুষ আছেন যাদের প্রতিনিয়ত ভালবাসায় আমি আর আমরা সিক্ত হয়েছি আর হচ্ছি।
তাই নিজ আর নিজেদের দায়বদ্ধতা হতেই আজ কিছু বিষয় আপনাদের সামনে তুলে ধরা দরকার এবং তা করতেই এই কথোপকথন। সবিনয় অনুরোধ থাকবে লেখাটি সম্পূর্ণ পড়বেন। না পড়ে অযথা লাইক পাবার জন্য এই লিখা নয়।
প্রসঙ্গঃ কানাডা স্কিল্ড মাইগ্রেশন (পিএনপি বা এক্সপ্রেস এন্ট্রি), আমেরিকা স্কিল্ড
মাইগ্রেশন (ইবি৩), অস্ট্রেলিয়া স্কিল্ড মাইগ্রেশন (সাব ক্লাস ১৮৯ এবং ১৯০,
জার্মানি স্কিল্ড মাইগ্রেশন (ব্লু কার্ড ভিসা) এবং অন্যান্য।
দেখুন প্রায় সব দেশেই কোন না কোন ভাবে মাইগ্রেট হয়ে যাবার ব্যাবস্থা আছে। সেটা স্টুডেন্ট হয়ে গিয়েও স্ট্যাটাস বদল করে হতে পারে বা ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে গিয়ে অথবা সরাসরি ভাবে। কিন্তু ঐ সকল ব্যাবস্থা সব সময় কার্যকর থাকে না। কিছু কিছু দেশ আবার সেই ব্যাবস্থা গুলোর নিয়ম নীতি বদল করে থাকে প্রায়শই। বর্তমানে অস্ট্রেলিয়া,কানাডা,মালয়েশিয়া,পর্তুগাল সহ বিভিন্ন দেশে মাগ্রেট বা অভিবাসী হওয়ার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু সুযোগ থাকলেই যে আপনার হয়ে যাবে তা কিন্তু নয়। এই সহজ ব্যাপারটাই আপনারা বুঝতে চান না।
উদাহরণ হিসেবে ধরুন পরিক্ষা দেয়া আর পরিক্ষায় পাশ করা দুটা আলাদা বিষয়। আমাদের দেশের নামি দামি বা প্রায় বেশির ভাগ ফার্মগুলো যা করে তা হল ফাইল ওপেনিং বিজনেস। এটা যে কত বড় একটা শুভঙ্করের ফাঁকি তা আপনারা অতি উচ্চ শিক্ষিত হয়েও ধরতে পারেন না। একটু খোলাখুলি বলি যেমন, আপনার হবে না জেনেও ওরা আপনার কাছ হতে ফাইল ওপেন বাবদ মোটা অঙ্কের টাকা নিবে। তারপর আবেদন করতে যা যা প্রয়োজন তা করাবে এবং আপনাকে দিয়ে আবেদনও করাবে। আপনি তো এতেই মহা খুশি যে ঐ প্রতিষ্ঠান তার কথামত আপনার আবেদন করিয়ে দিয়েছে। কিন্তু আপনি কি জানেন আপনার কোন কিছু হবে না জেনেও ওরা আপনাকে দিয়ে আবেদন করাচ্ছে। আমার বা আমাদের প্রশ্নটা সেখানেই। যদি জানেনই আপনার হবে না তবে অযথা আপনার টাকা আর সময় নষ্ট করার পেছনে কোন যুক্তি আছে বলে মনে করি না। তারপর আর কি ? ২/৩ বছর বা তারও বেশি সময় আপনাকে অপেক্ষা করাবে। আর তা করতে করতে একটা সময় নিজেই বিরক্ত হয়ে হাল ছেড়ে দিবেন। ফার্মগুলো সুন্দর আর চটকাদার বিজ্ঞাপন দিয়ে আপনাকে সরাসরি বলছে আপনার এই এই যোগ্যতা থাকলে আপনি আবেদন করতে পারবেন। কিন্তু আবেদনের পর কি হবে ? তা কি বলছে ? ভেবে দেখবেন আশা করি।
হাল জামানায় নতুন আওয়াজ উঠেছে আমেরিকা ইবি৩ মাইগ্রেশন ভিসা। এই ব্যাপারে গত সপ্তাহ হতে বেশ কয়েক জন আমাদের সাথে যোগাযোগ করেছেন ব্যাপারটি জানতে। দেখুন সত্যটা হল আমেরিকা এশিয়া হতে লোক নেয়া বন্ধ করেছে প্রায় ১০ বছর আগে। তাছাড়া ইবি৩ সিস্টেম নতুন নয়। এটাও সব দেশের জন্য উন্মুক্ত নয়। এখন আবেদনের আগে দেখতে হবে বাংলাদেশ এর আওতায় পরে কি না ? যদি পরেও তার মানে এই না যে আপনার হয়ে গেল। আর ইবি৩ সিস্টেমে ২ বছর সময় লাগবে তা তো ওরা ওদের বিজ্ঞাপনেই বলে দিচ্ছে। কিন্তু হবে কি না তার নিশ্চয়তা কি দিচ্ছে ? কথা হল সেটা। বাকিটা আপনার উপর। চোখ কান খুলা রেখে নিজে একটু ঘেটে দেখেন না। তারপর না হয় সিদ্ধান্ত নেবেন।
আরও মজার বিষয় দেখুন যেখানে আমেরিকার নতুন প্রেসিডেন্ট এই বলে ক্ষমতায় এসেছে যে তার দেশের লোকদের সব চাহিদা পূরণ করে অন্যদের কথা ভাববে আর সকল অবৈধ এবং রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থি অভিবাসিদের বের করে দিবে সেখানে নতুন করে আমেরিকা লোক নিবে বিশেষ করে এশিয়া তাও আবার এই দেশ হতে। একটু ভাবুন। নিজেই বুঝতে পারবেন। বিষয়টা কতটা হাস্যকর।
প্রসঙ্গঃ ওয়ার্ক পারমিট।
আপনারা আমাদের কাছে ফোন দিয়ে প্রায়ই কোন না কোন দেশের ওয়ার্ক পারমিট এর ব্যাপারে জানতে চান। তাই এই বিষয়ে একটু আলোকপাত।
আইনত বহির্বিশ্বের কোন দেশেই আমাদের দেশ হতে ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে যেতে কোন বাঁধা নেই। তবে ক্ষেত্র বিশেষে তার কিছু তারতম্য আছে। আর সব থেকে বড় কথা হল আপনি যার বা যাদের মাধ্যমে যাবার চেষ্টা বা কার্যক্রম চালাচ্ছেন তারা কতটুকু সৎ এবং কথায় আর কাজে কতটুকু মিল আছে তা দেখা।
গত মাস হতে এবং এই সপ্তাহে বেশ কয়েকজন যোগাযোগ করেছেন এবং কানাডার বিভিন্ন কোম্পানির কাছ হতে তাদের হাতে আসা ওয়ার্ক পারমিট এবং এই সংক্রান্ত বিভিন্ন কাগজ আমাদের কাছে পাঠিয়েছেন তা সঠিক কি না তা যাচাই করে দেখতে এবং তাদের ফাইল এম্বাসিতে জমা দেয়ার জন্য রেডি করে দিতে। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় তাদের কোম্পানি সব কাগজ পাঠায়নি। তাই উনাদের হয়ে আবার আমাদেরকেই সব করে দিতে হয়। অনেক ক্ষেত্রে আবার দেখা যায় যারা ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় পাঠাচ্ছেন তারা বিদেশের কোম্পানির নাম, ঠিকানা, ফোন নাম্বার, কাজের ধরণ বা এই সম্পর্কিত কোন কিছুই আবেদনকারীকে জানাতে চান না। যদি এই রকম হয় তবে এটা জেনে রাখবেন এতে অবশ্যই কোন ঘাপলা আছে। তাই সাধু সাবধান।
আবার কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান এই বলে বিজ্ঞাপন দিচ্ছে কানাডাতে ২/৪ বছরের ওয়ার্ক পারমিট সাথে পড়ার সুযোগ। এর সোজা মানে হল, আপনি স্টুডেন্ট ভিসায় গিয়ে পার্ট টাইম জব করবেন এছাড়া আর কিছু না। ওরা কেবল ওদের বিজ্ঞাপনের ভাষাটা একটু বদল করেছে। আগে আমরা বলতাম স্টুডেন্ট ভিসায় গিয়ে পড়ালেখার পাশাপাশি পার্ট টাইম কাজের সুযোগ আর এখন ওরা বলছে পার্ট টাইম ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে গিয়ে কাজের পাশা পাশি লেখা পড়ার সুযোগ। আসলেই ওদের বুদ্ধি আছে বটে ! কিন্তু খারাপ লাগে যখন দেখি আপনাদের বুদ্ধি ওদের হতেও কম।
প্রসঙ্গঃ স্টুডেন্ট ভিসা।
এবার আসি স্টুডেন্ট ভিসার কথায়। গত সপ্তাহ হতে একটা বিজ্ঞাপন চোখে আসছে আর আমার পরিচিত একজন শ্রদ্ধেয় ডাক্তার সাহেব তা উনার পেইজেও শেয়ার করেছেন। ওরা বলছে কানাডাতে ল্যাঙ্গুয়েজ কোর্স দিয়ে ভিসা করিয়ে কানাডা পাঠাতে পারবে। চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলতে পারি এটা কখনোই সম্ভব নয়। কানাডাতে ১ বছরের নীচের কোন কোর্সের জন্য এম্বাসি হতে আপনাকে ভিসা দিবে না। আর মেইন কোর্সের সাথে যদি ল্যাঙ্গুয়েজ স্কিল বাড়াতে ল্যাঙ্গুয়েজ কোর্স নেন সেটা ভিন্ন কথা। কিন্তু শুধু ল্যাঙ্গুয়েজ কোর্স দিয়ে কানাডা ? অসম্ভব।
ক’দিন আগে সিলেটে একটা ফার্ম বেশ বড় পরিসরে ঘটা করে সেমিনার করছে। উদ্দেশ্য জাপান স্টুডেন্ট পাঠানো। কিন্তু কোর্স সেই ল্যাঙ্গুয়েজ। ওদের প্রশ্ন করেছিলাম ল্যাঙ্গুয়েজ কোর্স দিয়ে ৩ বছরের জন্য তো স্টুডেন্ট ভিসায় পাঠাচ্ছেন কিন্তু এই কোর্স শেষ হলে কি হবে ? অন্য কোন কোর্সে কি তখন ভর্তি হওয়া যাবে বা জব নিয়ে থাকা যাবে ? আমি আজ পর্যন্ত সেই প্রশ্নের উত্তর পাইনি।
এবার ঠাণ্ডা মাথায় ভাবুন যে বা যারা নিজেরাই জানে না যাকে বা যাদের কে বাইরে পাঠাচ্ছে তারা ওখানে গিয়ে কি করবে ? তাদের ভবিষ্যৎ কি ? ওখানে সেটেল্ড হওয়া যাবে কি না ? হলে কত বছর পর ? বা কত সময় লাগবে ? কাজের সুযোগ আছে কি না ? পরবর্তীতে স্ট্যাটাস বদল করে ওয়ার্ক পারমিট নিতে পারবেন কি না ? ওখানে পি,আর বা স্থায়ী হতে পারবেন কি না ? সরকার হতে কোন বেনিফিট পাবেন কি না ? তাদের সাথে কাজ করতে যাবার আগে অন্ততঃ একটি বার ভেবে তারপর না হয় সিদ্ধান্ত নিন।
আপনাদের সকলের দীর্ঘায়ু আর মঙ্গল কামনা করি। ভাল থাকবেন।
= = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = =
ফ্রি অ্যাসেসমেন্ট বা আরও বিস্তারিত জানতে, সঠিক পরামর্শ অথবা সহযোগিতা পেতে আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।
সতর্কতাঃ
———–
প্রদত্ত সকল তথ্য সংশ্লিষ্ট সংস্থা বা দেশের বর্তমান ও প্রচলিত আইন বা নিয়ম অনুযায়ী। সংশ্লিষ্ট বিভাগ, সংস্থা বা সরকার তা যে কোন সময় পরিবর্তন, পরিবর্ধন, পরিমার্জন এবং বাতিল করতে করতে পারে।
© All Rights Reserved BICAVS 2012-2020